হীনমন্যতার অনুভূতির পিছনে বিভিন্ন কারণ
হীনমন্যতার অনুভূতির পিছনে বিভিন্ন কারণ আছে এবং তা শৈশব থেকে গজানো গুটি কয়েক কাঁটা মাত্র নয়।
একবার এক নির্বাহী আমার সাথে এক যুবকের ব্যাপারে পরামর্শ করেছিলেন যাকে দিয়ে তিনি তার কোম্পানির উল্কর্ষ সাধনের কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তিনি এ ভেঙ্গেই বললেন, যে, কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যাদির বিষয়ে ঐ যুবক বিশ্বাস করা মুশকিল এবং দুঃখ প্রকাশ করে বললেন যে, তিনি ওকে তার প্রশাসনিক সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করতে চান। ছেলেটির প্রয়োজনীয় সব গুণাবলীই আছে,
কিন্তু একটু বেশি বক বক করে, এবং অনথক আমাদের গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রকাশ করে ফেলে। ওকে নিয়ে একটু বিচার বিশ্লেষণ করে দেখলাম যে, সে আসলেই খুব বেশি কথা বলে, কিন্তু এও বুঝলাম এর পেছনের কারণটা হলো হীনমন্যতাবোধের অনুভূতি। আর এটাকেই পুঁষিয়ে নেবার জন্য নিজের জ্ঞানের পসরা দেখাতে সে এমন প্রবৃত্তির বশীভূত হয়েছে।
সে কিছু সংগতিসম্পন্ন লোকজনের সাথে চলাফেরা করত, যারা কলেজে যোগদান করেছিল এবং একটি ভাতৃসংঘের সদস্য। অথচ এ ছেলেটি কিন্তু লালিত পালিত হয়েছে, দারিদ্রের মধ্যে, কলেজে পড়ুয়া ছেলে সে নয়, নয় কোন ভাতৃসংঘের সদস্যও। এভাবেই সে শিক্ষা-দীক্ষায় ছোট এবং সামাজিক মর্যাদাহীনতার কারণে নিজেকে সঙ্গী-সাথীদের কাছে খুব হীন মনে করত। সঙ্গী-সাথীদের সাথে মানিয়ে চলতে এবং ধীরে ধীরে নিজেকে সুন্দর ও সম্মানীয় করে গড়ে তুলতে তার অবচেতন মন যা সবসময় জীবনের ঐ অভাবটুকু পূরণ করার জন্য একটা কলাকৌশল খুঁজে বেড়াত। আর এই বিষয়টাই তার অহমবোধকে জাগিয়ে তুলতে শক্তি যোগাতো।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরভাগে ছিল দায়িত্ব পালনের এলাকা, সেখানে সে তার উধ্বস্তনদের সাথে সভা করার জন্য যেত এবং নামী-দামী লোকদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হতো, তাদের গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা শুনত। তার সঙ্গীসাথীরা যাতে তাকে প্রশংসাবাদ করে ও ঈর্ষণীয় পাত্র হিসেবে দেখে সেজন্য সে ঐসব সঙ্গী-সাথীদের কাছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীণ গোপন খবর প্রচুর পরিমাণে ঢালতো। আর এতে তার আত্মসম্মান বাড়তো এবং তাদের কাছে স্বীকৃতি পেয়ে তার মনের ইচ্ছাগুলো পরিতৃপ্তিতে ভরে যেতো।
যখন ঐ চাকুরি প্রদানকারী লোকটা এ ধরনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে সাবধান হলেন এবং একজন দয়ালু ও বুঝবান মানুষ হওয়াতে তিনি যুবকটিকে ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধাগুলোর দিকে নির্দেশ করে বললেন যে, তার সামর্থ্য তাকে ঐদিকে পরিচালিত করতে পারত। তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বললেন যে, তার হীনমন্যতার অনুভূতি কিভাবে গোপন বিষয়ে তার উপর নির্ভরযোগ্যতা হীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আত্ম-জ্ঞান একই সাথে প্রার্থনা এবং বিশ্বাস স্থাপনের কলাকৌশলাদির অনুশীলনে তাকে পরবর্তীতে ঐ কোম্পানীর মূল্যবান এক সম্পদে পরিণত করেছিল। সে তার নিজের শক্তিগুলোকে অনুধাবন করতে পেরেছিল।